কক্সবাংলা ডটকম(১৪ সেপ্টেম্বর) :: মাত্র চার মাসের ব্যবধানে নতুন এক পরিস্থিতিতে ঢাকা সফরে আসছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু। কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি ও কূটনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হওয়া ডোলান্ড লুর এবারের সফর অন্য সব সময়ের চেয়ে আলাদা।
দেশত্যাগ করা সাবেক প্রধানমন্ত্রীর আমলে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে বরাবরই সোচ্চার ছিলেন ডোনাল্ড লু। তাঁর সফরের আগে-পরের সময়টা ঢাকার রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক অঙ্গনে পরিচিত ছিল ‘লু হাওয়া’ হিসেবেই। এবার পশ্চিমা বিশ্বের মিত্র নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকারের সময় এ ‘লু হাওয়া’ আসছে স্বস্তি নিয়ে।
তিন দিনের সফরে মার্কিন প্রতিনিধিদল সম্পর্ক জোরদারে সফরে গুরুত্ব পাবে দ্বিপক্ষীয় অর্থনৈতিক সহযোগিতা। আসতে পারে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার ঘোষণা। মার্কিন প্রতিনিধিদলের নেতৃত্বে থাকবেন মার্কিন অর্থ দপ্তরের সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যান। তার সঙ্গে দলে আরও থাকবেন মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের (পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) পক্ষ থেকে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু।
তবে লু ঢাকা আসছেন দিল্লি হয়ে। সেখানে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন তিনি। এ বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় ইস্যুর পাশাপাশি আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বাংলাদেশ প্রসঙ্গ।
সফরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে ডোনাল্ড লুর চেয়ে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা থাকলেও আলোচনায় উঠে এসেছে তারই নাম। কারণ, মার্কিন এই জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বাংলাদেশে পা রাখার আগে ভারতে নেতৃত্ব দেবেন ২+২ ইন্টারসেশনাল সংলাপে। এ ছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয় গত কয়েক বছর রাজনৈতিক অঙ্গনে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে নাম উঠে আসে ডোনাল্ড লুর।
যে কারণে লুর সফর নিয়ে ইতোমধ্যে আলোচনা শুরু হয়েছে বিভিন্ন মহলে। দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর এ নিয়ে পাঁচবার বাংলাদেশ সফর করেছেন লু। সবশেষ গত মে মাসে তার ঢাকা সফর ছিল আলোচনার শীর্ষে।
দুই দিনের সেই সফরে আওয়ামী সরকারের উচ্চপর্যায়ের কারও সঙ্গে বৈঠক বা কথাবার্তাও হয়নি তার। তবে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করা হয় এবং দ্রুত নতুন সরকারকে অভিনন্দন জানানোর পাশাপাশি সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দেয় যুক্তরাষ্ট্র। এর ধারাবাহিকতায় দেশটির প্রতিনিধিদল ঢাকায় আসছে আলোচনার জন্য। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি হবে ওয়াশিংটন থেকে উচ্চপর্যায়ের কোনো প্রতিনিধিদলের প্রথম বাংলাদেশ সফর।
এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) এবং মার্কিন সরকারের অধীন বেসামরিক বৈদেশিক সাহায্য প্রদানকারী সংস্থা ইউএসএআইডির প্রতিনিধিরাও দলে রয়েছেন। প্রতিনিধিদলটি আগামীকাল রোববার অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টা ও সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, প্রতিনিধিদলটি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূসের সঙ্গে রোববার সকালে সাক্ষাৎ করবে। এ ছাড়া অর্থ উপদেষ্টা সালেহ উদ্দিন আহমেদ, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গেও বৈঠক করবে দলটি। পরে পররাষ্ট্র সচিবের সঙ্গে ওয়ার্কিং লাঞ্চ করবেন মার্কিন অতিথিরা। পৃথকভাবে দলের কয়েকজন সদস্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেকনিক্যাল মিটিং করবেন।
ঢাকার এক কূটনীতিক বলেন, আলোচনায় গুরুত্ব পাবে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে। এ ছাড়া বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়ায়, তাই বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন।
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত ইতিবাচক পরিবেশে মার্কিন দলের বৈঠক হবে বলে আশা করছেন সরকারের কর্মকর্তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্র সচিব মো. জসিম উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের আলোচনা শুরু করার আগে আমি কোনো ধরনের মন্তব্য করতে চাই না, যেটি আলোচনার স্বাভাবিকতা ক্ষুণ্ন করে।
আমি শুধু এটি বলতে পারি যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রতিনিধিদল আসছে। তারা যে এই সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, সেটির বড় প্রতিফলন ঘটছে এর মাধ্যমে। প্রতিনিধিদলের সদস্যদের পরিচয় দেখলে বোঝা যায়, এই আলোচনা বহুমাত্রিক হবে। এটি শুধু একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের মধ্যে সীমিত থাকবে না। আমরাও এর সঙ্গে সংগতি রেখে প্রস্তুতি নিচ্ছি।’
প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মার্কিন অর্থ দপ্তরের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। স্বাভাবিকভাবে এবারের সফরে মূল আলোচনার ফোকাস আর্থিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা হবে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, ‘বৈঠকে মূলত বাংলাদেশের বর্তমান সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতার বিষয়গুলো প্রাধান্য পাবে। আসতে পারে তাৎক্ষণিক সহযোগিতার ঘোষণা। আর দীর্ঘমেয়াদে সহযোগিতার বিষয়গুলো দলটি সফর শেষে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করবে। সফর থেকে তারা মূলত বাংলাদেশের চাহিদাগুলো জানতে চাইবেন।’
সূত্রগুলো জানায়, ঢাকায় ৫ আগস্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে গুরুত্ব দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা চাচ্ছে, বাংলাদেশ যেন ঘুরে দাঁড়ায়। তাই বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের চাহিদাগুলো জানতে চাইবে ওয়াশিংটন। একই সঙ্গে বিষয়গুলোতে সামনের দিনে কীভাবে সহযোগিতা করা যায়, তা নিয়েও আলোচনা করবে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্র।
ঢাকার কূটনীতিকরা বলছেন, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে স্থিতিশীলতা রক্ষায় ঢাকার সঙ্গে নিরাপত্তাসহ আইপিএস ইস্যুতেও আলোচনায় আগ্রহী হতে পারে ওয়াশিংটন। বর্তমান বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে, অর্থনীতি-বাণিজ্যসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক সম্প্রসারণে কৌশলী ও ভারসাম্যের নীতি বজায় রাখার বিষয়ে চেষ্টা করবে বাংলাদেশ।
জানা যায়, সর্বশেষ গত মে মাসে মার্কিন একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ঢাকা সফর করেছিলেন ডোনাল্ড লু। তার আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে এসে ডোনাল্ড লু সব রাজনৈতিক দলকে সংলাপে বসে নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনার সরকার সেই পরামর্শ অগ্রাহ্য করে।
বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে সংলাপও হয়নি। শেষ পর্যন্ত বিএনপি ও তার জোট সঙ্গীরা সেই নির্বাচন বয়কট করে। টানা চতুর্থ মেয়াদে সরকার গঠন করেছিল আওয়ামী লীগ। শেষ পর্যন্ত গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিতে বাধ্য হন শেখ হাসিনা।
Posted ৩:৪৩ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta